বাস্তুতন্ত্রের প্রকারভেদ (পাঠ ৩-৫)

অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - বিজ্ঞান - পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্র | NCTB BOOK
1.7k
Summary

প্রাকৃতিক পরিবেশে দুটি প্রধান বাস্তুতন্ত্র রয়েছে: স্থলজ এবং জলজ বাস্তুতন্ত্র।

স্থলজ বাস্তুতন্ত্র: স্থলজ বাস্তুতন্ত্রের উদাহরণ হিসেবে বনভূমি ও মরুভূমির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। বাংলাদেশের বনভূমি দুটি প্রধান অঞ্চলে বিভক্ত: (ক) সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং (খ) খুলনার সুন্দরবন। সুন্দরবনে লবণাক্ত মাটির কারণে ম্যানগ্রোভ বন সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে উদ্ভিদগুলি শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য মাটির উপর উঠে আসে। উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদ হলো সুন্দরী, গরান, কেওড়া। প্রাণীদের মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, এবং বিভিন্ন পাখির উপস্থিতি রয়েছে।

জলজ বাস্তুতন্ত্র: জলজ বাস্তুতন্ত্রে প্রধানত তিনটি ধরনের রয়েছে: (১) পুকুরের, (২) নদ-নদীর, এবং (৩) সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র। পুকুরের বাস্তুতন্ত্রে অজীব উপাদান যেমন পানি এবং দ্রবীভূত গ্যাস রয়েছে, এবং জীব উপাদান হিসেবে উৎপাদক, খাদক ও বিযোজক রয়েছে। উৎপাদক হিসেবে ফাইটোপ্লাঙ্কটন এবং বড় উদ্ভিদ যেমন কচুরীপানা উল্লেখযোগ্য। বিভিন্ন কীটপতঙ্গ, মাছ ও অন্যান্য প্রাণী পুকুরের বিপরীত খাদ্যে খাদক হিসেবে কাজ করে, এবং ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক মৃত জীবাবশেষকে বিযোজকের কাজ করে।

প্রাকৃতিক পরিবেশে দু'ধরনের বাস্তুতন্ত্র রয়েছে। স্থলজ এবং জলজ বাস্তুতন্ত্র। তোমরা এ পাঠে স্থলজ বাস্তুতন্ত্র এবং জলজ বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে জানবে।

স্থলজ বাস্তুতন্ত্র
এ ধরনের বাস্তুতন্ত্র আবার বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন- বনভূমির বাস্তুতন্ত্র, মরুভূমির বাস্তুতন্ত্র ইত্যাদি। বনভূমির বাস্তুতন্ত্রের উদাহরণ হিসেবে আমরা বাংলাদেশের বনভূমি অঞ্চলের কথা বলতে পারি। বাংলাদেশের বনভূমি অঞ্চলকে প্রধান দুটি অঞ্চলে ভাগ করা হয়। (ক) সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল এবং (খ) খুলনার সমুদ্র উপকূলবর্তী সুন্দরবন অঞ্চল। নিচে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্র সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। সুন্দরবনের বনভূমি অন্যান্য অঞ্চলের বনভূমি থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের। খুলনা জেলার দক্ষিণে সমুদ্র উপকূল থেকে ভিতরের দিকে এ অঞ্চল বেশ কয়েক মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। জোয়ার-ভাটার কারণে এ অঞ্চলের মাটির লবণাক্ততা বেশি, কাজেই লবণাক্ত পানি সহ্য করার ক্ষমতাসম্পন্ন উদ্ভিদই এ বনাঞ্চলে জন্মে। সুন্দরবনের বনাঞ্চল ম্যানগ্রোভ বন নামে পরিচিত। এ বনের মাটি বেশ কর্দমাক্ত। কাজেই এর ভিতর দিয়ে সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে না। তাই এখানকার উদ্ভিদের মূল মাটির নিচে না গিয়ে খাড়াভাবে মাটির উপরে উঠে আসে। এসব মূলের আগায় অসংখ্য ছিদ্র থাকে। যার সাহায্যে উদ্ভিদ শ্বসনের জন্য বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন গ্রহণ করে। এ বনের উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদ হলো সুন্দরী, গরান, গেওয়া, কেওড়া, গোলপাতা ইত্যাদি। এরা এ বনের উৎপাদক। পোকামাকড়, পাখি, মুরগি, হরিণ এ বনের প্রথম স্তরের খাদক। বানর, কচ্ছপ, সারস ইত্যাদি দ্বিতীয় স্তরের খাদক। এ বনের তৃতীয় স্তরের খাদকদের মধ্যে রয়েছে বাঘ, শূকর ইত্যাদি। এ সবের মধ্যে শুকর সর্বভুক। এ বনের উল্লেখযোগ্য প্রাণী রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতা বাঘ, বানর, চিত্রল হরিণ, বন্য শূকর, কুমির, নানা ধরনের সাপ, পাখি এবং কীটপতঙ্গ। 

 

জলজ বাস্ত্রুতন্ত্র

জলজ বাস্তুতন্ত্র প্রধানত ভিন ধরনের। যথা-
১. পুকুরের বাস্তুতন্ত্র
২. নদ-নদীর বাস্তুতন্ত্র
৩. সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র

চিত্র ১৪.১ : একটি পুকুরের বাস্তুতন্ত্র

তোমাদের বোঝার সুবিধার্থে এখানে একটি পুকুরের বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো। স্বাদু পানির একটি ছোট পুকুর জলজ বাস্তুসংস্থানের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ উদাহরণ। পুকুরে রয়েছে অজীব ও জীব উপাদান। অজীব উপাদানের মধ্যে পুকুরে রয়েছে পানি, দ্রবীভূত অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং কিছু জৈব পদার্থ। এসব উপাদান জীব সরাসরি ব্যবহার করতে সক্ষম। জীব উপাদানের মধ্যে আছে উৎপাদক, প্রথম স্তরের খাদক, , দ্বিতীয় স্তরের খাদক, তৃতীয় স্তরের খাদক ও নানা রকমের বিযোজক। পুকুরের বাস্তুসংস্থানের উৎপাদক হচ্ছে মানা ধরনের ভাসমান ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক উদ্ভিদ যারা ফাইটোপ্লাঙ্কটন নামে পরিচিত। ভাসমান বড় উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে কচুরীপানা, শাপলা ইত্যাদি। তাসমান ক্ষুদ্র উদ্ভিদ যেমন পুকুরের পানিতে রয়েছে তেমনি রয়েছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক প্রাণী। এরা জু-প্লাঙ্কটন নামে পরিচিত। বিভিন্ন প্রকার জ কীটপতঙ্গ, ছোট মাছ, ঝিনুক, শামুক ইত্যাদি যারা উৎপাদকদের খায় তারা প্রথম র খাদক। আবার এদেরকে যারা খায় আরও একটু বড় মাছ, ব্যাঙ এরা দ্বিতীয় স্তরের খাদক। এদেরকে আবার যারা খায় যেমন কচ্ছপ, বক, সাপ এরা তৃতীয় স্তরের খাদক। পুকুরে মৃত জীবের উপর ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক বিযোজকের কাজ করে। বিবোজিত দ্রব্যাদি আবার পুকুরের উৎপাদক খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে।

Content added || updated By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...